লোকাল আসছে। অরুনাভ ট্রেনটা লক্ষ্য করতে থাকে।সে লক্ষ্য করে,ট্রেন টা যত এগিয়ে আসছে তত যেন চাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে ওই মেয়েটির। ট্রেন টা সামনে আসতেই,মেয়েটি একেবারে সামনে যেতে না যেতে ই অরুনাভ মেয়েটার হাত ধরে টান মারে। মেয়েটাও প্ল্যাটফর্ম এ ছিটকে পড়ে,আর অরুনাভ ও। বাকিরা ঘটনা না দেখার ভান করে, মারামারি করে ট্রেনে উঠে পড়ে। ট্রেন ছেড়েও দেয়।
"হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?"
"আপনার জীবন বাঁচালাম। আর এখন এরকম কথা বলছেন?"
"জীবন?আমাকে কি ভূতে ধরেছে যে আমি সুইসাইড করব। আবার একঘন্টা পর ট্রেন, দিলেন তো দেরি করে। এত পরোপকার যে আপনাদের কে করতে বলে!"
"আ..আসলে আমি ভাবলাম। আই অ্যাম ভেরি সরি।"
"আপনার হাত কেটে গেছে তো। হাত টা বাড়ান দেখি!"
"না তেমন কিছু নয়। থাক না..."
"অনেক পরোপকার করেছেন। হাত টা বাড়ান। সব সময় ব্যান্ডেড থাকে আমার কাছে।"
"আজকে অনেক লেট হয়ে যাবে,বস আজকে খুব ঝাড়বে।"
মেয়েটি হেসে বলল,"হ্যা বলবেন পরোপকার করতে গিয়ে একজনের লেট করে দিয়েছি স্যার"।কথোপকথন চলতে থাকে।কখন যে এক ঘন্টা কেটে যায় বুঝতে পারে না অরুণাভ। ট্রেন আসে,ওরা ওঠে মেয়েটি দমদমে নেমে যায়। কথাবার্তায় শুনেছিল অরুণাভ যে,আজ দিদির বাড়ি যাচ্ছে ও।
"ইস এত কথা বললাম, নামটাই জিগেস করতে ভুলে গেলাম। "হাত কামড়ায় অরুনাভ।শিয়ালদহ নেমে,বাসে করে অফিস পৌছায়।লেটের জন্য সেই দিন ঝাড় খাইনি সে। বস যে আজ অফিসেই আসেনি। এরকম ভাগ্য কজনের ই বা থাকে।পকেট থেকে ফোনটা বার করে অরুনাভ। ১২টা মিস কল। অনিন্দিতা কে ফোন করল অরুনাভ। অরুণাভ ওর প্রেমিকা। ৫ বছরের রিলেশন। অরুণাভ এখন নামি বেসরকারি কোম্পানির ম্যানেজার। সময় দারুন কাটছে।
অরুনাভ দাশগুপ্ত,বালির ছেলে। মধ্যবিত্ত কিন্তু মেধাবী। অনিন্দিতার সাথে অনেক দিনের সম্পর্ক। বছর খানেক কেটে যায়।
"স্যার, আমাকে ডাকলেন?"
"হুম দাশগুপ্ত। বসো।"
"স্যার আমি কিছু দোষ করেছি?"
"না তুমি একজন সৎ,নিষ্ঠা বান কর্মচারি। কিন্তু খুব খারাপ লাগছে এটা বলতে আমাদের কোম্পানির তোমাকে আর দরকার নেই।আমরা নতুন ম্যানেজার এ্যাপয়েন্ট করতে চাই। আই অ্যাম ভেরি সরি। তোমাকে কাল থেকে আর আসতে হবে না।স্যালারি টা কালেক্ট করে নিও।"
বেরিয়ে যায় ওখান থেকে অরুণাভ। কিভাবে মুখ দেখাবে বাড়িতে।তাদের কিভাবে বলবে চাকরি চলে গেছে?কে তার কথা বুঝবে?
"অনিন্দিতা প্লিস একবার দেখা কর না!"
"জায়গা বল আসছি!"
অনিন্দিতা আসলে সমস্ত কথা বলে ওকে।অরুনাভ ভেবেছিল,এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সেই তার পাশে দাঁড়াবে।
"দেখ অরুণাভ, আমার বাড়িতে প্রচন্ড বিয়ের প্রেশর দিচ্ছে। ভাবছিলাম তোর কথা বলব। এখন দেখছি চাকরি ও চলে গেছে।আর কি বলব।মা বাবার দেখা ছেলেটাকেই বিয়ে করতে হবে।"
"তুই পারবি?ছয় বছরের সম্পর্ক আমাদের!তুই অপেক্ষা কর। আমি একটা চাকরি..."
"চুপ কর।আমার সাথে সিকিমে ফস্টি নস্টি করার সময় মনে ছিল না। তোর চাকরি আছে। তোর মত... "
"কিরে থেমে গেলি বল!"
"নাহ থাক। আর আমাকে ফোন করবি না।সম্পর্ক এখানেই শেষ। "
৬ বছরের রিলেশন, সে চিনতে পারে নি অনিন্দিতাকে।বাড়িতেও নানান ঝামেলা শুরু হয়।মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে তো,ওর রোজগারেই সংসার চলে।রোজ ই বেরোয়,কিন্তু চাকরি পায় না। একদিন বিধাননগর স্টেশনে উঠে স্থির করে নেয় আজ সুইসাইড করবে। রোজ কার এক ঝামেলা আর ভালো লাগছে না। অনিন্দিতার বিয়ে পরশু দিন হয়ে গেছে।ভেতর ভেতর গুমড়ে মরছিল।২টো ট্রেন পর পর ছেড়ে দিল,এই মনস্থির করতে। তৃতীয় ট্রেন ঢুকছে, সেই সময় অরুনাভ এগিয়ে যেতে ই, এক হ্যাচকা টানে প্ল্যাটফর্ম এ পড়ে যায় অরুভাব। হাতের ফাইল টা খুলে যায়। ট্রেনে বাকিরা উঠে যায়, ট্রেন ছেড়ে দেয়।পেছন থেকে খিল খিল হাসি,অরুণাভ উঠতেই,"এটাকে রিভেঞ্জ বলবেন না কিন্তু। আমার ও মনে হল আপনি..."
"আরে আমি সত্যি ই..."
"থামুন।আপনার মিথ্যা বলার অভ্যাস গেল না। অনেকক্ষন আগেই দেখেছি।আপনার চক্করে দুটো ট্রেন আমাকেও ছাড়তে হল।দেখেই মাথায় বুদ্ধি খেলে গেছিল।"
"আপনার স্মৃতি শক্তি দারুন দেখছি।"
"ফাইলটা তুলুন। আপনি দেখছি এম.কম।ওয়ার্কিং এক্সপ্রিয়েন্স ও দারুন। আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার স্লটটা ফাকা আছে। কাজ করবেন!"
"এ তো সৌভাগ্য!"
"কাল ইন্টার্ভিউ আছে।চলে আসবেন। ধরে রাখুন এবার থেকে একসাথেই ফিরব বাড়ি। "
কথা বলতে বলতে ট্রেন ঢুকে গেল স্টেশনে।
"আর এই ট্রেনটা মিস করতে পারব না। আমার অফিসের কার্ড! "
ট্রেন ছেড়ে দেয়,"ম্যাডাম আপনার নামটা?"
"অনিন্দিতা,অনিন্দিতা চক্রবর্তী.. "ট্রেন বেরিয়ে যায়। বুকে ফাইলটা নিয়ে প্ল্যাটফর্মএ বসে পরে।আজ আবার মন খুলে নিশ্বাস নিচ্ছে মনে হচ্ছে।এক অনিন্দিতা সব কেড়ে নিলে, এক অনিন্দিতা সব ফিরিয়ে দিতেও জানে। আবার একটা ট্রেন বেরিয়ে গেল। চোখের জলটা মুছে নেয় অরুণাভ। এগিয়ে যায় পরের ট্রেনের জন্য,তার জীবন যে আর থেমে থাকার নয়।এগিয়ে তাকেই যেতে হবে,হ্যা যেতেই হবে।
click here